পরিণত বয়সের কিডনি রোগীদের মতো, শিশু-কিশোরদের কিডনি রোগের উপসর্গ বা
লক্ষনগুলো সাধারণত দৃশ্যমান হয় না বিধায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের কিডনি
জনিত রোগগুলো অনেক দেরিতে সনাক্ত হয়।শিশুদের সাধারণত দুই ধরনের কিডনির
রোগ বেশি হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে নেফ্রোটিক সিনড্রোম ও অ্যাকিউট
নেফ্রাইটিস।
নেফ্রোটিক সিনড্রোম
নেফ্রোটিক সিনড্রোম লক্ষণ :- সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সের
শিশুর হয়ে থাকে। ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশি হয়। প্রথম দিকে দুই চোখের পাতা
ফুলে যায় ও মুখে ফোলা ভাব দেখা যায়। পরে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পেটে,
হাতে ও পায়ে পানি জমে এবং সারা শরীর ফুলে যায়। শিশুর অণ্ডকোষে পানি জমতে
পারে। এর সঙ্গে কখনো বা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, রং সাধারণত স্বাভাবিক
থাকে। শিশুর রক্তচাপ সচরাচর স্বাভাবিক থাকে। প্রস্রাব জ্বাল দিলে
প্রোটিনের পুরু স্তর পাওয়া যায়।
রোগ নির্ণয় :-
- প্রস্রাবে খুব বেশি পরিমাণে প্রোটিন বেরিয়ে যায় (৪০ মিলিগ্রাম)। প্রতি স্কয়ার মিটার সারফেস এরিয়া বা প্রতি ঘণ্টায় প্রস্রাবের বেশি।
- সিরাম লিপিডে উচ্চ মাত্রা, ২২০ গ্রামের বেশি।
- রক্তে অ্যালবুমিনের সর্বনিম্ন, ২ গ্রামের কম।
- শিশুর সারা শরীর ফুলে যায়।
অ্যাকিউট নেফ্রাইটিস
অ্যাকিউট নেফ্রাইটিসের লক্ষণ :- প্রধানত স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের
মধ্যে এ রোগ হয়ে থাকে। শিশুর শরীরে খোসপাঁচড়া বা গলা ব্যথা অসুখের ১০
থেকে ২১ দিন পরে সাধারণভাবে এ রোগ প্রকাশ পায়। স্টেপটোকক্কাই নামের
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এ জন্য দায়ী।
অ্যাকিউট নেফ্রাইটিসের উপসর্গ :-
- হঠাৎ করে চোখ-মুখ, সারা শরীর ফুলে যেতে পারে।
- প্রস্রাব হয় বন্ধ কিংবা পরিমাণে খুব অল্প হতে পারে। বেশির ভাগ সময় প্রস্রাবের রং লাল থাকে।
- কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ থেকে ২১ দিন আগে গলা ব্যথা হয়ে থাকে। কখনো ত্বকে খোসপাঁচড়াজাতীয় চিহ্ন থাকে।
- শিশুর রক্তচাপ বেশি থাকতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা কি কি :-
- প্রস্রাব পরীক্ষায় কিছুটা প্রোটিনের সঙ্গে আরবিসি কাস্ট পাওয়া যায়।
- কিডনির কার্যক্ষমতা বোঝার জন্য ব্লাড ইউরিয়া, সিরাম ক্রিয়েটিনিন মাত্রা দেখা যায়। সিরাম পটাশিয়ামের উচ্চমাত্রা ইসিজির সাহায্যেও বোঝা যেতে পারে।
বাচ্চার খোসপাঁচড়া বা গলাব্যথা অসুখে সময়মতো চিকিৎসা করাতে হবে। ৯০ থেকে
৯৫ শতাংশ অ্যাকিউট নেফ্রাইটিসের শিশু সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। তবে সময় নষ্ট
না করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিন। শিশুদের কিডনি বা মূত্রতন্ত্রের সমস্যা
প্রথম পর্যায়েই সনাক্ত করা গেলে সাধারণ চিকিৎসার মাধ্যমেই সমস্যা খুব
দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। তাই মা-বাবাকে শিশুর এই ধরনের সমস্যার ব্যাপারে
সতর্ক থাকা দরকার।
0 comments:
Post a Comment