Pages

Subscribe:

Thursday, April 30, 2015

পেটের যত অসুখ

আমাদের দেশে বেশিরভাগ লোক যে রোগটিতে ভোগেন তা হল পেটের পীড়া। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে এ পীড়ার প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। পেটের পীড়া বলতে আমরা সাধারণত বুঝি আমাশয়, ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা কিংবা হজমের অসুবিধা। পেটের পীড়াকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, খাদ্যনালি (পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র কিংবা বৃহদান্ত্রের রোগ)। দ্বিতীয়ত, লিভারের প্রদাহ। খাদ্যনালির কারণজনিত পেটের পীড়াকে দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। * স্বল্পমেয়াদি পেটের পীড়া * দীর্ঘমেয়াদি পেটের পীড়া স্বল্পমেয়াদি পেটের পীড়ার কারণ হচ্ছে * আমাশয় া রক্ত আমাশয় া ডায়রিয়া আমাশয় অ্যামিবিক ডিসেন্ট্রি স্বল্পমেয়াদি পেটের পীড়ার অন্যতম কারণ যা এন্টাবিমা হিস্টোলাইটিকা নামক জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়। এটি মূলত পানিবাহিত রোগ। যারা যেখানে-সেখানে খোলা বা বাসি খাবার খেয়ে থাকেন অথবা দূষিত পানি পান করেন তাদের এ রোগ হয়। শহর অঞ্চলে রাস্তার পাশের খোলা খাবার খেলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে যারা যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করেন, কিংবা নদী ও পুকুরের পানি পান করেন তারা এ রোগে আক্রান্ত হন বেশি। এ রোগের উপসর্গ হঠাৎ করে দেখা দেয়। যেমন- ঘন ঘন পেটে মোচড় দিয়ে পায়খানা হওয়া, পায়খানার সঙ্গে রক্ত বা আম মিশ্রিত অবস্থায় যাওয়া, পায়খানায় বসলে উঠতে ইচ্ছা হয় না বা ওঠা যায় না। ক্ষেত্র বিশেষে দিনে ২০-৩০ বার পর্যন্ত পায়খানা হতে পারে। রক্ত আমাশয় রক্ত আমাশায়ের প্রধান কারণ হল এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যার নাম শিগেলা। এ শিগেলা দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। রক্ত আমাশয়ের লক্ষণ হল- পেটে তীব্র মোচড় দিয়ে ব্যথা হওয়া, অল্প অল্প করে বারবার পায়খানা হওয়া, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া এবং মলদ্বারে তীব্র ব্যথা হওয়া। ডায়রিয়া ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ খাদ্যে নানা ধরনের পানিবাহিত ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। * ছোট শিশুদের ডায়রিয়া সাধারণ রোটা ভাইরাস নামক ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। * বড়দের ক্ষেত্রে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে যে ডায়রিয়া মহামারী আকারে দেখা দেয়, তার অন্যতম কারণ হল কলেরা। শীতকালে কলেরার প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। পাতলা পায়খানা হলে যদি চাল ধোয়া পানির মতো হয় তবে সেটা কলেরার লক্ষণ। এর সঙ্গে তলপেটে ব্যথা হওয়া, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, ঘনঘন পায়খানায় যাওয়া এবং শরীর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া এ রোগের উপসর্গ। এ সময়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। পেটের পীড়ার অন্য কারণগুলোর হচ্ছে পিত্তথলি, পাকস্থলী, অগ্নাশয় এবং অন্ত্রের প্রদাহ। -দীর্ঘমেয়াদি পেটের পীড়ার মধ্যে রয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়। এ দীর্ঘস্থায়ী আমাশয় মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- * ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম * খাদ্য হজম না হওয়াজনিত পেটের পীড়া * বৃহদান্ত্রের প্রদাহজনিত পেটের পীড়া এ অসুখগুলো মূলত ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রের রোগ। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) অল্প বয়স্ক বা উঠতি বয়স্ক, ছাত্রছাত্রী, যারা নবীন চাকরিজীবী তাদের মধ্যে ওইঝ রোগটি বেশি দেখা যায়। এ রোগের লক্ষণ হল পেটে মোচড় দিয়ে ঘনঘন পায়খানা হওয়া, যা সকালে নাশতার আগে ও পরে বেশি হয়। IBS হলে অনেকের পায়খানা নরম বা অনেকের পায়খানা কঠিন হয়। কঠিন বা নরম যাই হোক না কেন রোগীর পায়খানার সঙ্গে বাতাস যায় এবং পেটে অস্বস্তি ভাব হয়। অনেকে বলেন, দুধ, পোলাও কোরমা, বিরিয়ানি খেলে এটি বেশি হয়। এটি সঠিক নয়। ওইঝ যাদের হয় তাদের স্বাস্থ্যহানি হওয়ার আশঙ্কা কম। খাদ্য হজম না হওয়াজনিত পেটের পীড়া ক্ষুদ্রান্ত্র এবং অগ্নাশয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ থাকলে এ রোগটি হয়ে থাকে। প্রচুর পরিমাণে দুর্গন্ধযুক্ত, সাদা পায়খানা হওয়া, পায়খানার সঙ্গে হজম না হওয়া খাদ্য কণার মিশ্রণ এবং নির্গত মল পানির ওপরে ভাসতে থাকা এ রোগের উপসর্গ। এর সঙ্গে পেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা হওয়া, পেট ফুলে যাওয়া কিংবা ধীরে ধীরে শরীরের ওজন কমে যাওয়া এ রোগের লক্ষণ। বৃহদান্ত্রের প্রদাহজনিত পেটের পীড়া এটি একটি মারাত্মক ব্যাধি। আমাদের দেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব কম, উন্নত বিশ্বে এ রোগ বেশি হয়। এ রোগের লক্ষণ হল আম ও রক্তমিশ্রিত পায়খানা হওয়া, জ্বর কিংবা জ্বর জ্বর ভাব হওয়া এবং শরীর আস্তে আস্তে ভেঙে যাওয়া। সব বয়সের মানুষের এ রোগ হয়। Colonoscopy নামক পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায় এবং চিকিৎসা পেলে এ রোগ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পিত্তথলির পাথর, পিত্তনালির প্রদাহ, অগ্নাশয়ের প্রদাহ এবং পাকস্থলীর ও ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রদাহের কারণে পেটের পীড়া হতে পারে। পিত্তথলির পাথর ও পিত্তনালির প্রদাহজনিত পেটের পীড়া এ রোগে আক্রান্তদের তীব্র পেট ব্যথা হতে পারে। কয়েকদিন পরপর ব্যথা ওঠে এবং কয়েকদিন পর্যন্ত তা থাকে। ব্যথার সঙ্গে বমি ও জ্বর হতে পারে। ব্যথা পেটের ডানপাশের উপরিভাগে অনুভূত হয়। ব্যথা তীব্র হলে রোগী কষ্টে কাতরাতে থাকেন। অগ্নাশয়ের প্রদাহজনিত পেটের পীড়া অগ্নাশয়ের কাজের ওপর নির্ভর করে হজমের ক্ষমতা এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ঠিক রাখা। স্বল্পমেয়াদি অগ্নাশয়ের প্রদাহ হলে তাকে Acute Pancreatitis বলে, যার অন্যতম কারণ- * ভূরিভোজ করা। * পিত্তনালি বা পিত্তথলিতে পাথর * অ্যালকোহল পানে আসক্তি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মৃদু বা সহনীয় ব্যথা ভালো হয়ে যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসায় বিলম্ব কিংবা অবহেলা করলে জটিল আকার ধারণ করতে পারে, এমনকি প্রাণহানিও ঘটতে পারে। পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রদাহ পেটের উপরিভাগে দীর্ঘদিন বারবার ব্যথা হওয়া, Peptic Ulcer রোগের লক্ষণ যা পাকস্থলীর প্রদাহের কারণে হয়। এ প্রদাহ দুরারোগ্য ব্যাধি। এ রোগকে পেটের পীড়ার অন্যতম কারণ বলা যায়। আমাদের দেশে ১২ শতাংশ লোক Peptic Ulcer-এ ভুগছেন। এছাড়া যারা অনিয়মিত খান, অতিরিক্ত ধূমপান করেন তাদের এ রোগ বেশি হয়। লক্ষণের মধ্যে রয়েছে, খালি পেটে ব্যথা, শেষরাতে ব্যথা এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা। এ রোগ সেরেও সেরে ওঠে না। খাবারের প্রতি অনীহা, অরুচি, অস্বস্তি, ওজন কমে যাওয়া- এসবের অন্যতম কারণ দীর্ঘমেয়াদি লিভারের প্রদাহ। এ প্রদাহ এমন আকার ধারণ করে যা দীর্ঘস্থায়ী জটিল লিভার সিরোসিসে রূপ নিতে পারে। পেটের পীড়ার চিকিৎসা স্বল্পমেয়াদি পেটের পীড়ায় আক্রান্ত রোগীর শরীর খুব তাড়াতাড়ি পানিশূন্য হয়ে যায়। এ অবস্থা প্রতিরোধের জন্য রোগীকে প্রচুর পরিমাণে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে এবং প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর খাবার স্যালাইন খাওয়ানো বাঞ্ছনীয়। * রোগীর শরীরে জ্বর থাকলে এবং পেটে ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক প্রদান করতে হবে। * শিশুদের ক্ষেত্রে যেহেতু ভাইরাসজনিত কারণে পেটের পীড়া বেশি হয়; তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোগীকে কোনো ধরনের ওষুধ না খাওয়ানোই শ্রেয়। তবে শিশুর শরীর যাতে পানিশূন্য না হয়, সেজন্য প্রতিবার পাতলা পায়খানা হলে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি শিশুকে সব ধরনের খাদ্য প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। যদি শিশু মায়ের দুধ পান করে থাকে, তবে কোনো অবস্থাতেই তা বন্ধ করা যাবে না। * অনেকে কবিরাজি, গাছগাছড়া বা ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে এ জাতীয় পেটের পীড়া থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে রোগীর ভোগান্তিই কেবল বাড়ে এবং রোগও জটিল রূপ ধারণ করে। লেখক : লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ - See more at: http://www.jugantor.com/stay-well/2013/09/07/26496#sthash.8HuldiP1.dpuf

0 comments:

Post a Comment